ধারণাগত (deemed) আয়: আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা–১৯ এর একটি পর্যালোচনা*
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
- আসাদ হাফিজ
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর কতগুলো ধারা আছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ধারা-১৯। এ ধারাটি যেমন কর কর্মকর্তাদের বিস্তারিতভাবে জানা প্রয়োজন, তেমনি করদাতাদেরও এ ধারা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে ভাল। এ ধারাটি সঠিকভাবে প্রয়োগ না করলে যেমন কর নির্ধারণী আদেশের ধারণাগত আয়ের অংশ বিজ্ঞ আপিল (১ম আপিল), বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল (২য় আপিল) বা বিজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হয়ে যেতে পারে, তেমনি করদাতাগণেরও এ ধারাটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে করদাতার কি ধরনের বিনিয়োগ বা সম্পদ (ধারণাগত) আয় হিসেবে গণ্য হতে পারে তা বুঝতে না পারার কারণে তাদের আয়কর নথি প্রায়শ:ই নিরীক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এখন দেখা যাক, ধারণাগত আয় কি!
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ তে আয়ের সংজ্ঞা দেয়া হলেও ধারণাগত আয়ের কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। তাহলে প্রথমে দেখা যাক, আয় কি। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা-২ এর ক্লজ (৩৪) এ আয়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে তা চূড়ান্ত কোন সংজ্ঞা নয়, সংজ্ঞাটি একজসটিভ না, ইনক্লুসিভ। ক্লজে আয়ের সরাসরি কোন সংজ্ঞা না দিয়ে আয় কি কি অন্তর্ভুক্ত করে তা উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন অনলাইন উৎসে আয়ের যে সব সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
কোন নিদিষ্ট সময়কালে কোন সত্ত্বা কর্তৃক যে পরিমাণ ভোগ ও সঞ্চয় করা হয় তার সমষ্টিই আয় যা অর্থিক মূল্যে প্রকাশ করা হয়। [Smith’s financial dictionary, Wikipedia]
অন্যত্র আয় বলতে বুঝানো হয়েছে, কোন ব্যক্তি বা গৃহস্থ কর্তৃক নিদিষ্ট একটি সময়ে যে পরিমাণ মজুরি, বেতন, মুনাফা, সুদ, ভাড়া বা অন্য কোন প্রাপ্তি থাকলে তাকে আয় বলে। তবে জন অর্থনীতিতে কোন সুবিধা প্রাপ্ত হলেও তা আয় হিসেবে গণ্য হবে। যেমন-নিয়োগকারী যদি তার কর্মচারীকে থাকার জন্য বাড়ি দেয়, তবে এ সুবিধাটির আর্থিক মূল্য আয় হিসেবে গণ্য হবে। আয়কর অধ্যাদেশেও এ জাতীয় সুবিধাকে অর্থ মূল্যে রূপান্তরিত করে আয় হিসেবে গণ্য করার বিধান রয়েছে। আয়কর আইনের ভাষায় এ জাতীয় সুবিধার আর্থিক মূল্যকে ধারণাগত আয় বলা হয়ে থাকে। তবে, ধারা-১৯ এ জাতীয় আয় নিয়ে আলোচনা করেনি।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা-২ এর ক্লজ (৩৪) অনুযায়ী, আয় নিম্নোক্ত বিষয়সমূকে অন্তর্ভুক্ত করে (বঙ্গানুবাদ সঠিক নাও হবে পারে, ইংরেজি পাঠ পড়ার জন্য অনুরোধ করা হলো):
- যে কোন উৎস হতে কোন আয়, প্রাপ্তি, মুনাফা বা মূলধনী লাভ যার উপর আয়কর অধ্যাদেশ মোতাবেক কর প্রদেয়;
- আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যে প্রাপ্তির উপর উৎসে কর আদায়যোগ্য;
- লোকসান;
- বাংলাদেশে উদ্ভূত বা গৃহীত কোন প্রাপ্তি বা বাংলাদেশে উদ্ভূত বা গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায় এমন কোন প্রাপ্তি;
- আয়কর অধ্যাদেশ মোতাবেক যা আয় হিসেবে বিবেচিত; প্রভৃতি।
2(34) | “income” includes- | |
(a) | any income, receipts, profits or gains, from whatever source derived, chargeable to tax under any provision of this Ordinance; | |
(b) | any amount which is subject to collection or deduction of tax at source under any provision of this Ordinance; | |
(c) | any loss of such income, profits or gains; | |
(d) | the profits and gains of any business of insurance carried on by a mutual insurance association computed in accordance with paragraph 8 of the Fourth Schedule; | |
(e) | any sum deemed to be income, or any income accruing or arising or received, or deemed to accrue or arise or be received in Bangladesh under any provision of this Ordinance; | |
(f) | any amount on which a tax is imposed; | |
(g) | any amount which is treated as income under any provision of this Ordinance; |
এখানে সাব-ক্লজ (জি) তে যে আয়ের কথা বলা হয়েছে তাকে ধারণাগত আয় বলা যেতে পারে।
আয়কর ধার্যের ভিত্তি হলো আয়। উপরোক্ত সংজ্ঞায় আয় কি তা বলা হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী শুধুমাত্র আয়ের উপরই কর ধার্য করা যায়। সম্পদ বা বিনিয়োগের উপর সরাসরি কর ধার্য করা যায় না। সম্পদ বা বিনিয়োগের উপর কর ধার্য করতে হলে সাব-ক্লজ (জি) অনুযায়ী প্রথমে তাকে আয় হিসেবে গণ্য করতে হবে।
আয়কর অধ্যাদেশে এমন কিছু বিষয়ের উপর কর ধার্যের বিধান রয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে করদাতার আয় নয়। আইনের প্রভিশনসমূহ যথাযথভাবে মান্য না করলে এ জাতীয় আয়ের উদ্ভব ঘটে। এ জতীয় বিষয়কেই ধারণাগত আয় (deemed income) বলা হয়েছে। এটাকে এক ধরনের শাস্তিমূলক আয়ও বলা যায়। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা-১৯ এ এ জাতীয় আয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৯ ধারায় বর্তমানে ৩০টি কার্যকরী উপ-ধারা রয়েছে যার মধ্যে ৩টি গৃহসম্পত্তির আয় [১৯(২২), ১৯(২২এ) ও ১৯(৩০)][তবে ২৪ ধারায় এ উপ-ধারা তিনটি অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি, যেমনটি করা হয়েছে কৃষি আয় (ধারা-২৬), ব্যবসা আয় (ধারা-২৮) ও অন্যান্য উৎসের আয়ের (ধারা-৩৩) ক্ষেত্রে], ২টি কৃষি আয় [১৯(১৭) ও ১৯(১৯)], ৫টি ব্যবসা আয় [১৯(১৫), ১৯(১৬), ১৯(১৮), ১৯(২০) ও ১৯(২৩)] ও ১৭টি অন্যান্য উৎসের আয় [১৯(১), ১৯(২), ১৯(৩), ১৯(৪), ১৯(৫), ১৯(৮), ১৯(৯), ১০(১০), ১৯(১১), ১৯(১২), ১৯(১৩), ১৯(২১), ১৯(২৪), ১৯(২৭), ১৯(২৯), ১৯(৩১) ও ১৯(৩২)] হিসেবে বিবেচিত। তবে আমি আমার আলোচনায় বিলুপ্ত উপ-ধারা (২১বি) সহ ৩১টি উপ-ধারা আলোচনা করব। উপ-ধারা (২১বি) ধারা-১৯ হতে বিলোপ করা হলেও তা ধারা-৮২বিবি তে সংযুক্ত করা হয়েছে, যদিও আমি মনে করি তা ধারা-১৯ এ থাকাই অধিক যুক্তিযুক্ত ছিল। ৮২বিবি(১২) তে সংযুক্ত এ ধারার আয় বর্তমানে ব্যবসা আয় হিসেবে বিবেচিত [যদিও ২৮ ধারায় (ব্যবসা আয়) এ আয়ের বিষয়ে উল্লেখ নেই] যা পূর্বে অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচিত ছিল। অন্যান্য উপ-ধারাসমূহ মূলত: বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা।
নিম্নে উপ-ধারা অনুযায়ী ধারা-১৯ পর্যালোচনা করা হলো:
(চলবে)
* এ লেখার বক্তব্য লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। কোন ব্যাখ্যা যদি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে তা তাৎক্ষণিক বাতিল বলে গণ্য হবে। এ লেখাকে কোথাও রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। শুধুমাত্র সাধারণ ধারণা লাভের জন্য।