Skip to main content

বিলম্বে রিটার্ন দাখিল বা রিটার্ন দাখিল না করার জরিমান [ধারা-১২৪]

বিলম্বে রিটার্ন দাখিল বা রিটার্ন দাখিল না করার জরিমান [ধারা১২৪]

০২১২২০২০

১. নির্ধারিত সময়ের পরে রিটার্ন দাখিল করলে বা আদৌ রিটার্ন দাখিল না করলে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১২৪ ধারায় জরিমানার আরোপের বিধান রয়েছে।

২. জরিমানার পরিমাণ – সর্বশেষ নিরূপিত করের ১০% বা ৳ ১,০০০ – এর মধ্যে যেটি বড়। উদাহরণস্বরূপ – একজন করদাতার ২০১৯-২০ করবর্ষে প্রদেয় কর ৳ ২০,০০০। তাহলে এককালীন জরিমানার পরিমাণ হবে (৳২০,০০০ এর ১০%) ৳ ২,০০০।

৩. পরবর্তী প্রতিদিন বিলম্বের জন্য দৈনিক ৳ ৫০।

৪. ব্যক্তি করদাতা কখনো রিটার্ন দাখিল না করলে জরিমানা সর্বোচ্চ ৳ ৫,০০০।

৫. ব্যক্তি করদাতার পূর্বে আয় নিরূপিত হয়ে থাকলে সর্বোচ্চ জরিমানার পরিমাণ হবে সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর আরোপিত করের ৫০% বা ৳ ১,০০০ – এর মধ্যে যেটি বেশি।

৬. জরিমানা আরোপ করার পূর্বে করদাতার নিকট ব্যাখ্যা চাইতে হবে (১৩০ ধারার নোটিশ জারী করতে হবে)।

৭. জরিমানা আরোপ সার্কেল কর্মকর্তার ইচ্ছাধীন। তিনি যৌক্তিক মনে করলে জরিমানা নাও করতে পারেন।

৮. এ ধারায় জরিমনা ধার্য করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

সারচার্জ কি? সারচার্জের ভিত্তি কি??

সারচার্জ কি, সারচার্জের ভিত্তি (base) কি, এ বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। বিশেষ করে, ধারা-১৯ এ বিভিন্ন সময়ে যে নতুন ধারাসমূহ (যেমন, ১৯এএএএএ, ১৯বিবিবিবিবি, প্রভৃতি) সংযোজনের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের যে সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে এবং তার উপর যে কর পরিশোধ করা হয়, তার উপর সারচার্জ প্রযোজ্য হবে কিনা। ফেসবুকের কর শিক্ষণ কেন্দ্রেও প্রশ্নের মাধ্যমে বিষয়টি অনেকে জানতে চেয়েছেন। অনেকে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন। আমিও যে মতামত দিব তা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত। এর  সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোন সংশ্লেষ নেই।

প্রথমে দেখা যাক, সারচার্জ কি?

আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ তে সারচার্জের কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। অধ্যাদেশের ৪র্থ অধ্যায়ে (Charge of Income tax) ধারা-১৬বি সংযোজনের মাধ্যমে সারচার্জ আরোপের আইনগত বৈধতা দেয়া হয়েছে। ধারা-১৬বি পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাতীয় সংসদ যদি মনে করে কোন করদাতার আয়ের উপর সারচার্জ আরোপ করা হবে, তাহলে সারচার্জ আরোপ ও আদায় করা যাবে। জাতীয় সংসদ প্রতি বছর অর্থ আইনের মাধ্যমে কর আরোপ করে থাকে এবং বিগত কয়েক বছর যাবৎ সারচার্জও আরোপ করে আসছে।

এখন দেখা যাক, অর্থ আইনে সারচার্জ বিষয়ে কি বলা হয়েছে।

অর্থ আইন, ২০২১ এর অনুচ্ছেদ-৩৪ এ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর অধীন সারচার্জ আরোপের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদ-৩৪ এ বলা হয়েছে, অর্থ আইনের তফসিল-২ এর দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত হারে সারচার্জ আরোপিত হবে।

অর্থ আইন, ২০২১ এর তফসিল-২ এর দ্বিতীয় অংশ দুটি ভাগে বিভক্ত। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা-১৬বি সকল শ্রেণির করদাতার উপর সারচার্জ আরোপের ক্ষমতা দিলেও অর্থ আইন, ২০২১ তা সীমিত করেছে। অর্থ আইন, ২০২১ এর তফসিল-২ এর দ্বিতীয় অংশের অনুচ্ছেদ-ক তে শুধুমাত্র ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের উপর সারচার্জ আরোপের বিধান করা হয়েছে। আর অনুচ্ছেদ-খ তে করদাতা শ্রেণি নির্বিশেষে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত করদাতার শুধুমাত্র তামাকজান পণ্য উৎপাদন হতে আয়ের উপর সারচার্জ আরোপের বিধান করা হয়েছে। আমার আলোচনা শুধুমাত্র অনুচ্ছেদ-ক এ সীমিত রাখব।

অনুচ্ছেদ-ক পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিট সম্পদের ভিত্তিতে শুধুমাত্র ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের উপর সারচার্জ আরোপিত হবে। সারচার্জ আরোপিত হবে আয়কর প্রযোজ্য এ রূপ আয়ের উপর। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যে আয়ের উপর আয়কর প্রযোজ্য নয়, সে আয়ের উপর সারচার্জ আরোপিত হবে  না। যেমন- সফটওয়ার ব্যবসা হতে আয়। যেহেতু সফটওয়ার ব্যবসা হতে আয় করমুক্ত, তাই উক্ত আয়ের উপর কোন সারচার্জ প্রদেয় হবে না। তাহলে আমরা বলতে পারি, যে সব আয়ের উপর কর প্রদেয় (সে যে হারেই হোক না কেন) উক্তরূপ সকল আয়ের উপর মোট প্রদেয় করের উপরই সারচার্জ আরোপিত হবে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, সারচার্জের ভিত্তি হচ্ছে প্রদেয় আয়কর। অর্থাৎ প্রদেয় আয়করের উপর নিট সম্পদের ভিত্তিতে অনুচ্ছেদ-ক এ বর্ণিত হারে সারচার্জ আরোপিত হবে।

তাহলে এখন আমাদের জানা দরকার, কর বা আয়কর কি, বা প্রদেয় আয়কর কি।

আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা-২ এর ক্লজ (৬২) তে করের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। উক্ত সংজ্ঞায় কর বলতে বুঝানো হয়েছে, আয়কর অধ্যাদেশের অধীন প্রদেয় যে কোন কর। এর মধ্যে অতিরিক্ত কর (additional tax), অতিরিক্ত মুনাফার উপর কর (excess profit tax), জরিমানা (penalty), সুদ (interest), ফি (fee) বা যে কোন চার্জ (other charges) সব অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সরাসরি আয়কর নয় (যেমন-জরিমানা, সুদ, প্রভৃতি) তার উপরও সারচার্জ প্রদেয়। সহজভাবে বলা যায়, আয়কর অধ্যাদেশের অধীন প্রদেয় যে কোন অংকের উপর সারচার্জ প্রযোজ্য।

এখন দেখা যায়, ধারা-১৯ এর অধীন প্রদেয় কর আয়কর কিনা। ধারা-১৯ কি, ধারা-১৯ কি নিয়ে পর্যালোচনা করেছে, এ বিষয় এ লেখকের পর্যালোচনামূলক বিস্তারিত একটি লেখা রয়েছে যেটি দেখা যেতে পারে।

সংক্ষেপে বললে বলা যায়, ১৯ ধারা সরাসরি কোন আয় নিয়ে আলোচনা করেনি। করদাতাদের আয়সমূহ ২০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং পরবর্তী ধারাসমূহে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।  কিন্তু করদাতার যখন কোন সম্পদ উদঘাটিত হয়, কিন্তু দৃশ্যমান আয়ের উৎস পাওয়া যায় না, তখন ধরে নেয়া হয় যে, করদাতা যে মূল্যে সম্পদ করেছেন তার সমপরিমাণ আয় কখনো না কখনো কোন না কোন ভাবে পূর্বে আয় করেছেন যার উপর যথাসময়ে কর প্রদান করেননি। যেহেতু এ জাতীয় আয়ের উৎস জ্ঞাত নয়, বা সুনির্দিষ্ট নয়, অথবা করদাতা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চান না, কিন্তু আয়কর যেহেতু আয়ের বিপরীতেই আরোপ করা যায়, সম্পদের বিপরীতে নয়, তাই সম্পদের সমপরিমাণ আয় অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ধারা-১৯ মূলত এ বিষয়টিকেই প্রয়োগের পদ্ধতিগত দিক নিয়ে আলোচনা করেছে।

ধারা-১৯ এর উপধারা-১ থেকে উপধারা-৩২ পর্যন্ত যে বিষয়সমূহ আলোচনা করা হয়েছে, এ সব উপধারায় যখন আয় নিরূপণ করা হয় তখন তা মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে স্বাভাবিক হারে কর ধার্য হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন করদাতার প্রদর্শিত দায় যখন উপ কর কমিশনার গ্রহণ করেন না, তখন তিনি উক্ত দায়কে ১৯(১) ধারায় অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচনাকরত: মোট আয়ের সাথে যোগ করেন এবং মোট আয়ের উপর আরোপিত করের উপর বিধি মোতাবেক সারচার্জ পরিগণনা করা হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ১৯(১) থেকে ১৯(৩২) ধারার মধ্যে কোন ধারায় আয় নিরূপিত হলে তার বিপরীতে সারচার্জ আরোপিত হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯এ, ১৯এএ, ১৯এএএ, ১৯এএএএ, ১৯এএএএএ, ১৯বি, ১৯বিবি, ১৯বিবিবি, ১৯বিবিবিবি, ১৯বিবিবিবিবি, ১৯সি, ১৯ডি, ১৯ডিডি, ১৯ই –  এ ধারাসমূহের বিপরীতে যখন কোন কর পরিশোধ করা হয়, তখন তার উপর সারচার্জ প্রদেয় হবে কিনা।

পূর্বেই বলেছি, আয়কর ধার্য হয়, আয়ের উপর। যখন কোন আয় সুনির্দিষ্টভাবে নিরূপণ করা যায় না, তখন তা ১৯ ধারায় অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯ এর এ সব ধারাসমূহে যেহেতু সুনির্দিষ্ট সম্পদ বা বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে, এবং উক্ত সম্পদ বা বিনিয়োগের উপর কর আরোপের বিধান করা হয়েছে, তা প্রকারন্তরে বিনিয়োগ বা সম্পদের সমপরিমাণ আয় করদাতার ছিল মর্মে ধরে নেয়া হয়েছে। উক্ত আয়ের উপরই এ সব ধারায় নির্দিষ্ট হারে কর আরোপের বিধান করা হয়েছে যাতে করদাতারা সহজেই সম্পদ বা বিনিয়োগসমূহ প্রদর্শন করতে পারেন।

যেহেত ১৯ ধারায় বিবেচিত সম্পদ বা বিনিয়োগকে আয় হিসেবে ধরে নেয়া হয়, সেহেতু উক্ত সম্পদ বা বিনিয়োগের বিপরীতে পরিশোধিত কর আয়কর। সারচার্জের বিধান অনুযায়ী প্রদেয় আয়করের উপর সারচার্জ প্রযোজ্য। সেহেতু এ সব ধারায় পরিশোধিত করের বিপরীতে সারচার্জ প্রদান করতে হবে।

অন্যভাবে যদি বিবেচনা করা হয়, করের সংজ্ঞায় আয়কর অধ্যাদেশের অধীন প্রদেয় যে কোন অংকই করের আওতাভুক্ত; যেমন, জরিমানা, সরলসুদ, বিলম্ব সুদ, প্রভৃতি। ঠিক তেমনি ১৯ এর বিভিন্ন ধারায় পরিশোধিত করও ২(৬২) ধারায় প্রদত্ত করের সংজ্ঞার আওতাভুক্ত বিধায় উহার উপর সারচার্জ প্রদেয়।

একইভাবে,বিভিন্ন সময়ে এসআরও এর মাধ্যমে সম্পদ ঘোষণার যে সুযোগ দেয়া হয় তা প্রকান্তরে অঘোষিত আয়ই ঘোষণা। এসআরও যেহেতু আয়কর আইনের অধীনেই জারী করা হয়, সেহেতেু উক্ত এসআরও এর ভিত্তিতে পরিশোধিত করও ২(৬২) ধারায় প্রদত্ত করের সংজ্ঞার আওতাভুক্ত। এসব এসআরও এর ভিত্তিতে পরিশোধিত করের উপরও সারচার্জ প্রদেয়।

 

*এ মতামত লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত।