ধারণাগত আয় (Deemed Income): ধারা-১৯ এর একটি পর্যালোচনা [পর্ব-৩]
আসাদ হাফিজ
(2) |
Where, in any income year, the Assessee has made investments or is found to be the owner of any bullion, jewellery or other valuable article and the Deputy Commissioner of Taxes finds that the amount expended on making such investments or in acquiring such bullion, jewellery or other valuable article exceeds the amount recorded in this behalf in the books of account maintained by the Assessee for any source of income and the Assessee offers no explanation about the excess amount or the explanation offered is not, in the opinion of the Deputy Commissioner of Taxes, satisfactory, the excess amount shall be deemed to be the income of the Assessee for such income year classifiable under the head “Income from other sources”. | |||
কোন আয় বর্ষে একজন করদাতা যদি কোন বিনিয়োগ করে থাকেন বা মূল্যবান কোন সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন এবং সম্পদ ও দায় বিবরণীতে উক্ত সম্পদের প্রকৃত অর্জনমূল্য থেকে যদি কম মূল্য প্রদর্শন করা হয়, তাহলে কম প্রদর্শিত মূল্যের স্বপক্ষে যথাযথ ব্যাখ্যা দাখিল না করলে বা দাখিলকৃত ব্যাখ্যা আইনানুগ না হলে কম প্রদর্শিত মূল্য এ ধারা মোতাবেক অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে গণ্য হবে এবং মোট আয়ের সাথে যোগ করতে হবে। | ||||
ধরা যাক, একজন করদাতা বিবেচ্য করবর্ষে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। ফ্ল্যাটের মূল্য বাবদ ডেভেলপার কোম্পানিকে অর্থ প্রদান করেছেন ২ কোটি টাকা যা চেকের মাধ্যমে ও ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করা হয়েছে। ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন খরচ বাবদ প্রদান করেছেন আরো ১০ লক্ষ টাকা। তাহলে ফ্ল্যাটের জন্য মোট প্রদান করেছেন ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকায়। রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৫ লক্ষ খরচ প্রদর্শনপূর্বক সম্পদ ও দায় বিবরণীতে ফ্ল্যাটটির মোট মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে ৫৫ লক্ষ টাকা।
সার্কেল কর্মকর্তা আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১১৩(এফ) ধারায় ফ্ল্যাট ডেভেলপার কোম্পানির নিকট হতে ক্রেতা কর্তৃক পরিশোধিত মোট অর্থের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এখন করদাতার নিকট অতিরিক্ত পরিশোধিত (২.১০ কোটি – ৫৫ লক্ষ) ১.৫৫ কোটি যা অপ্রদর্শিত তার ব্যাখ্যা চাইতে হবে। করদাতা যদি ব্যাখ্যা দাখিল না করেন বা দাখিলকৃত ব্যাখ্যা আইনানুগ না হয় তাহলে উক্ত কম প্রদর্শিত অর্থ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৯(২)/৩৩ডি ধারায় অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে গণ্যকরত: মোট আয়ের সাথে যোগ করতে হবে। |
||||
সার্কেল কর্মকর্তাগণ এ জাতীয় অপ্রদর্শিত সম্পদকে ধারণাগত আয় হিসেবে গণ্য করার জন্য নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ ব্যবহার করতে পারেন: | ||||
“করদাতা আলোচ্য বর্ষে এ্যাসেট ডেভেলমেন্ট কোম্পানি কর্তৃক বাড়ি-…., সড়ক-৯, ধানমণ্ডি আ/এ, ঢাকায় নির্মিত ৯ তলা আবাসিক ভবনের ৫ম তলায় ১৬০০ বর্গফুট আয়াতন বিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন যার দলিল নং-……, তারিখ: ২২ জুন ২০১৯ (দলিল নথিতে রক্ষিত)। করদাতা ফ্ল্যাটটির রেজি. খরচসহ মূল্য প্রদর্শন করেছেন ৫৫ লক্ষ টাকা। পরবর্তীতে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১১৩(এফ) ধারায় ডেভেলপার কোম্পানি হতে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, রেজি. খরচসহ ডেভেলপার কোম্পানিকে করদাতা মোট পরিশোধ করেছেন ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রদর্শন করেছেন ৫৫ লক্ষ টাকা। করদাতা ফ্ল্যাটের মূল্য কম প্রদর্শন করেছেন (২.১০ কোট – ৫৫ লক্ষ =) ১.৫৫ কোটি টাকা। কম প্রদর্শিত মূল্যের বিষয়ে করদাতার নিকট ব্যাখ্যা চাওয়া হলে (করদাতা কোন ব্যাখ্যা দাখিল করেননি) / (করদাতা লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করেন যা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়)। এমতাব্স্থায়, ফ্ল্যাটের অপ্রদর্শিত মূল্য ১.৫৫ কোটি টাকা আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৯(২)/৩৩ডি ধারায় অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে গণ্যকরত: উহা মোট আয়ের সাথে যোগ করা হলো ..”। | ||||
আরো একটি উদাহরণ দেয়া যাক।
ধরা যাক, একজন করদাতা প্রতি তলা ২০০ বর্গ মিটার আয়াতনের একটি ৯ তলা দালান নির্মাণ করেছেন যার নির্মাণ ব্যয় প্রদর্শন করেছেন ৳ ৩,০৯,৫০,০০০। পিডাবলিউডির ২০১৪ সালের নির্মাণ ব্যায়ের হার অনুযায়ী নির্মাণ ব্যয় আসে ৳ ৪,৫৩,১৮,৩৬৮। এক্ষেত্রে কম প্রদর্শিত নির্মাণ ব্যয় (৪,৫৩,১৮,৩৬৮ – ৩,০৯,৫০,০০০ =) ৳ ১,৪৩,৬৮,৩৬৮ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৯(২)/৩৩ডি ধারায় অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে গণ্য হবে। |
||||
কর নির্ধারণী আদেশে বিষয়টি নিম্নরূপভাবে লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে: | ||||
বাড়ি নির্মাণে বিনিয়োগ পর্যালোচনা:
আলোচ্য করবর্ষে করদাতা প্রতিতলা ২০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট একটি ৯ তলা বাড়ি নির্মাণ সম্পন্ন করেছেন। প্রদর্শিত নির্মাণ ব্যয় ৳ ৩,০৯,৫০,০০০। বাড়িটি কর পরিদর্শক দ্বারা তদন্ত করানো হয়েছে (যদি তদন্ত করানো হয় তাহলে লিখতে হবে, না করালে কিছু উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই)। ২০১৪ সালের পিডাবলিউডি এর নির্মাণ হার অনুযায়ী বাড়িটির বিনিয়োগ নিম্নরূপে পর্যালোচনা করা হলো: |
||||
তলা |
পরিমাপ |
প্রতি বর্গ মিটার খরচ (৳) |
মোট খরচ (৳) |
|
ফাউন্ডেশন |
২০০ বর্গমিটার |
৳ ১৭,৭১৯ |
৩৫,৪৩,৮০০ |
|
নিচ তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১০,০৮০ |
২০,১৬,০০০ |
|
২য় তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১৭,১১৮ |
৩১,৮৪,৪০০ |
|
৩য় তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১৭,৩৭৪ |
৩৪,২৩,৬০০ |
|
৪র্থ তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১৭,৬৩৫ |
৩৫,২৭,৬০০ |
|
৫ম তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১৭,৯০০ |
৩৫,৮০,০০০ |
|
৬ষ্ঠ তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১৮,০৭৯ |
৩৬,১৫,৮০০ |
|
৭ম তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১৭,০১৮ |
৩৪,০৩,৬০০ |
|
৮ম তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১৭,১৪৬ |
৩৪,২৯,২০০ |
|
৯ম তলা |
২০০ বর্গমিটার |
১৭,২৭৫ |
৩৪,৫৫,০০০ |
|
অন্যান্য খরচ: | ||||
গ্যাস সংযোগ-নীচ তলা |
২০০ বর্গমিটার |
৩৪২.২০ |
৮৮,৪৪০ |
|
গ্যাস সংযোগ-
২য় হতে ৯তলা) |
২০০ বর্গমিটার |
৳ ১,৩৬.৮৮ × ৮ |
২,১৯,০০৮ |
|
অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যয় |
২০০ বর্গমিটার |
৳ ২,১৩৪.৪০ × ৯ |
৩৮,৪১,৯২০ |
|
অভ্যন্তরীণ পানি ও পয়ঃ ব্যয় |
২০০ বর্গমিটার |
৳ ৯০০ × ৯ |
১৬,২০,০০০ |
|
টাইলস করা বাবদ ব্যয় |
২০০ বর্গমিটার |
৳ ১,৬০০ × ৮ |
২৫,৬০,০০০ |
|
রিজার্ভ ট্যাংক ব্যয় |
১২,০০০ লিটার |
প্রতি লিটার ৳ ৬০ |
৭,২০,০০০ |
|
ছাদের উপর রিজার্ভ ট্যাংক ব্যয় |
৪,০০০ লিটার |
প্রতি লিটার ৳ ৬০ |
২,৪০,০০০ |
|
লিফ্ট খরচ |
১২,০০,০০০ |
|||
সেফটি ট্যাংক খরচ |
৮,০০,০০০ |
|||
জেনারেটর খরচ |
৪,০০,০০০ |
|||
গেট তৈরি আনুমানিক |
১,৫০,০০০ |
|||
বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি |
৩,০০,০০০ |
|||
প্রাক্কলিত মোট নির্মাণ ব্যয় |
৪,৫৩,১৮,৩৬৮ |
|||
বাদ: প্রদর্শিত নির্মাণ ব্যয় |
৩,০৯,৫০,০০০ |
|||
অতিরিক্ত ব্যয় |
১,৪৩,৬৮,৩৬৮ |
|||
অতিরিক্ত বিনিয়োগের বিষয়ে করদাতার নিকট ব্যাখ্যা চাওয়া হলে করদাতা উহার কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দাখিল না করায় আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৯(২)/৩৩ডি ধারায় মোট আয়ের সাথে যোগ করা হলো .. | ||||
আর একটি উদাহরণ দেয়া যাক – | ||||
একজন করদাতা আলোচ্য বর্ষে ২,৯৭২ বর্গফুটের একটি স্পেস ক্রয় মূল্য প্রদর্শন করেছেন ৳ ৭২,৫০,০০০। কিন্তু করদাতা প্রকৃতপক্ষে উক্ত স্পেস ক্রয়ের জন্য বিক্রেতাকে পরিশোধ করেছেন (রেজি. খরচসহ) ৳ ২,২৬,৭৯,৯৬০ যার স্বপক্ষে সার্কেল কর্মকর্তা ১১৩(এফ) ধারায় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। এ কম প্রদর্শিত বিনিয়োগ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৯(২)/৩৩ডি ধারায় অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচ্য। কর নির্ধারণী আদেশে বিষয়টি নিম্নরূপভাবে লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে: |
||||
বাণিজ্যিক স্পেস ক্রয়ঃ আরবান ড্রিম, ….. নিউ ইস্কাটন, ঢাকা | ||||
করদাতা আলোচ্য করবর্ষে উক্ত দালানে ২,৯৭২ বর্গ ফুট বাণিজ্যিক স্পেস ক্রয় করেছেন (দলিল নং-….., তারিখ: ২৭ জুন ২০১১) যার মূল্য প্রদর্শন করেছেন ৳ ৭২,৫০,০০০। দালানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরবান ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড এর নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, করদাতা উক্ত স্পেস ক্রয় বাবদ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করেছন ৳ ২,২০,৭৬,৯৬০। রেজিস্ট্রেশন খরচসহ স্পেসের মূল্য দাড়ায় (৳ ২,২০,৭৬,৯৬০ + ৳ ৬,০০,০০০ =) ৳ ২,২৬,৭৬,৯৬০। করদাতা কম বিনিয়োগ প্রদর্শন করেছেন (৳ ২,২৬,৭৬,৯৬০ – ৳ ৭২,৫০,০০০ =) ৳ ১,৫৪,২৬,৯৬০। এ কম প্রদর্শিত বিনিয়োগের বিষয়ে করদাতার নিকট লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে (নথি নং-…………., তারিখ: ………) করদাতা এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন। করদাতাকে সময় প্রদানপূর্বক ………. তারিখ শুনানির দিন ধার্য করা হলে করদাতার প্রতিনিধি জনাব ……………….. শুনানিতে হাজির হন। তিনি জানান যে, প্রকৃত ক্রয়মূল্য থেকে কম মূল্যে দলিল রেজিষ্ট্রি করায় কম মূল্য প্রদর্শন করেছেন। তিনি অতিরিক্ত বিনিয়োগকৃত অর্থের কোন ব্যাখ্যা দাখিল করতে পারেননি। এমতাবস্থায়, অতিরিক্ত অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ ৳ ১,৫৪,২৬,৯৬০ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৯(২)/৩৩ডি ধারায় অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে মোট আয়ের সাথে যোগ করা হলো …………… ১,৫৪,২৬,৯৬০। | ||||
১৯ ধারায় এ জাতীয় বিনিয়োগকে আয় হিসেবে গণ্য করলে সম্পদ ও দায় বিবরণী পুনর্গঠন করতে হবে। সম্পদ ও দায় বিবরণী পুনর্গঠন করা না হলে সম্পদ ও দায় বিবরণী পর্যালেচনা যথাযথ হবে না এবং এক্ষেত্রে করদায় কম হতে পারে। পরবর্তীতে সম্পদ ও দায় বিবরণী পর্যালোচনা অন্য কোন লেখায় করব ইনশাআল্লাহ। | ||||
১৯(২) ও ১৯(৪) ধারা দুটি মূলত একই ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। পার্থক্য হচ্ছে- যদি অর্জিত সম্পদের মূল্য কম প্রদর্শন করা হয় তাহলে ১৯(২) ধারা প্রযোজ্য হবে, আর সম্পদ যদি গোপন করা হয় তাহলে ১৯(৪) ধারা প্রযোজ্য হবে। |
(চলবে)
No Comments yet!